খলিলুর রহমান
ঠাকুরগাঁও
প্রশ্ন : আম গাছের ডাল, পাতা ও ফলে কালো ফোসকার মতো দাগ পড়ে। করণীয় কী?
উত্তর : আপনার আম গাছ অ্যানথ্রাকনোজ নামক রোগে আক্রান্ত। এটি একটি ছত্রাকজনিত রোগ। এ রোগের প্রতিকার বা করণীয় হলো -
- আক্রান্ত অংশগুলো সংগ্রহ করে পুড়ে ফেলা।
- আম বাগান পরিষ্কার রাখা।
- বছরে দুইবার সুষম সার প্রয়োগ করা।
রোগ দেখা দিলে প্রতি লিটার পানিতে ১ মিলি প্রাফিকোলাজল (টিল্ট) বা ১ গ্রাম কার্বেন্ডাজিম (ব্যাভিস্টিন বা নোইন) মিশিয়ে ১২ থেকে ১৫ দিন অন্তর স্প্রে করতে হবে।
পলাশ চন্দ্র
নীলফামারী
প্রশ্ন : পাট গাছের কচি পাতা ও ডগা পোকা কেটে দিচ্ছে। কী করণীয়?
উত্তর : পাটের ঘোড়া পোকার কীড়া গাছের কচি পাতা কুঁড়ি, ডগা খায়। এ পোকার আক্রমণ হতে রক্ষা পেতে আক্রান্ত পাতা কীড়াসহ নষ্ট করতে হবে। ক্ষেতে ডাল পুঁতে পোকা খেকো পাখি বসার ব্যবস্থা করতে হবে।
আক্রমণ বেশি হলে অনুমোদিত যে কোনো একটি বালাইনাশক যেমন- ডায়াজিনন, সেভিন, রিপকর্ড, ক্যারাটে ব্যবহার করতে হবে।
মো. ফাইজ উদ্দিন
কুলিয়ারচর, কিশোরগঞ্জ
প্রশ্ন : ছোট ছোট কুমড়া হলুদ হয়ে পচে ঝরে যাচ্ছে। এখন কী করব?
উত্তর : কুমড়া ফলের মাছি পোকার আক্রমণে ৫০ থেকে ৭০ ভাগ ফল নষ্ট হয়ে যেতে পারে। মাছি পোকা মিষ্টিকুমড়ার প্রধান শক্র।
আক্রান্ত পল দেখা মাত্র তা তুলে মাটিতে পুঁতে ফেলতে হবে।
সেক্স ফেরোমন এবং বিষটোপ ফাঁদের যৌথ ব্যবহারে সফলভাবে এ পোকা দমন করা যায়। আক্রমণ বেশি হলে ডিপটেরক্স ৫০ ইসি ১.০ মিলি বা ২ মিলি সবিক্রন, সাইপামেথ্রিন ১ মিলি. প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে গাছে স্প্রে করতে হবে।
মো. কাদের
ময়মনসিংহ
প্রশ্ন : কলাগাছের পাতাগুলো গুচ্ছাকারে বের হচ্ছে এবং কচি পাতার কিনারা ওপরের দিকে বাঁকানো ও হলুদ রঙের। প্রতিকার কী ?
উত্তর : কলাগাছের গুচ্ছমাথা ভাইরাসজনিত রোগ। আক্রান্ত গাছ দেখামাত্র গোড়াসহ তুলে পুড়ে বা পুঁতে ফেলতে হবে।
ভাইরাসের বাহক পোকা (জাবপোকা, থ্রিপস) দমনের জন্য ইমিডাক্লোরপ্রিড জাতীয় (এসাটাফ, টিডো, এডমায়ার) কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে।
মো. আবদুল বারেক
লালপুর, নাটোর
প্রশ্ন : লালশাক পাতার নিচে সাদা বা হলুদ দাগ দেখা যায়, পরে পাতা মরে যায়। কী করণীয়।
উত্তর : লালশাক বা ডাঁটার মরিচা রোগের লক্ষণ। এ রোগ গাছের শিকড় ছাড়া সব অংশে আক্রমণ করে।
প্রতিকার ● পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন চাষাবাদ করা।
● ফসলের পরিত্যক্ত অংশ পুড়ে নষ্ট
করা।
● সুষম সার ব্যবহার করা।
● রোগ দেখা দিলে ছত্রাশনাশক হিসাবে
প্রকিকোনাজল (টিল্ট) ০.৫ মিলি
প্রতি লিটার পানি সহযোগে স্প্রে করা।
আরমান হোসেন
নোয়াখালী
প্রশ্ন : পুকুরে পোনা মজুদ সম্পর্কে জানতে চাই।
উত্তর : বিশ্বস্ত নার্সারি বা ভালো উৎস থেকে মানসম্পন্ন পোনা সংগ্রহ করতে হবে। সাধারণত পলিথিন ব্যাগ, পাতিল বা ড্রামে করে পোনার স্বাস্থ্যগত অবস্থা, পরিবহন দূরত্ব ও সময়, পানির তাপমাত্রা ইত্যাদি বিবেচনায় রেখে পোনা পরিবহন করে পুকুরের পানির সাথে খাপ খাইয়ে নিয়ে পোনা মজুদ করতে হয়। পোনাকে শোধন বা ব্যাক্টেরিয়ার হাত থেকে রক্ষার জন্য ২০ লিটার পানিতে ১ মুটি লবণ মিশ্রিত করে পানির মিশ্রণে জালের মধ্যে পোনা নিয়ে ১ মিনিট রেখে তারপর পুকুরে ছাড়তে হবে।
রবিউল ইসলাম
নীলফামারী
প্রশ্ন : ভালো পোনা কোথায় পাওয়া যাবে এবং কীভাবে চেনা যায়?
উত্তর : ভালো মানের পোনার জন্য সরকারি হ্যাচারি বা সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় বেসরকারি হ্যাচারি থেকে ভালো মানের ব্রুড মাছ ব্যবহার করে উৎপাদিত পোনা সংগ্রহ করতে হবে।
ভালো পোনা চকচকে থাকবে (উজ্জ্বল বর্ণের) হবে। পোনার লেজ ধরলে যে পোনা ঝাঁকি দেবে বা নড়াচড়া করবে সেটি সুস্থ সবল পোনা। পোনার গায়ে কোনো স্পট থাকবে না। পাতিলের পানি হাত স্রোতের সৃষ্টি করলে ভালো পোনা উল্টোদিকে সাঁতার কাটবে। পুকুরে ছাড়ার সময় ভালো পোনা বের হয়ে যাবে আর ভালো না হলে নড়াচড়া কম করবে এবং ভেতরে রয়ে যাবে।
মো. মিজানুর রহমান
জামালপুর
প্রশ্ন : কৈ চাষ ব্যবস্থাপনা কীভাবে করব?
উত্তর : পুকুর ২০ থেকে ২৫ শতাংশ এবং ১ থেকে ১.৫ মিটার গভীর জলাশয়ে কৈ চাষ করলে ভালো হয়। পুকুর প্রস্ততির সময়ে ১ কেজি চুন, ৮ থেকে ১০ কেজি গোবর, ১০০ গ্রাম ইউরিয়া ও টিএসপি দিতে হবে। ২০০ থেকে ২৫০টি শতাংশ হারে চারা পোনা মজুদ করতে হবে। মাছের মোট ওজনের ৪ থেকে ৫% হারে ৩ বারে খাবার দিতে হবে। সম্পূরক খাদ্য ৩৫ থেকে ৪০% প্রোটিনযুক্ত হলে ভালো হয়। ফিশমিল ২০%+ সরিষা/-সয়াবিন খৈল ৩৫%+ চালের কুঁড়া ৪০%+ আটা ৪%+ ভিটামিন ও খনিজ ১% হারে মিক্স করতে হবে। পরিচর্যা ঠিকমতো করলে ৬ মাসে ওজন হবে গড়ে ৪০থেকে ৫০ গ্রাম এবং বিক্রি করা যায়। ১২ থেকে ১৩ কেজি- শতাংশ উৎপাদন হয়ে থাকে।
রানা আহমেদ
বগুড়া
প্রশ্ন : পানির পিএইচ কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়?
উত্তর : পুকুর বা খামার তৈরির সময় চুন ১ কেজি-শতক হারে ৩ থেকে ৫ ফুট পানির গভীরতায় প্রয়োগ করতে হবে। মজুদ পরবর্তীতে ২৫০ থেকে ৫০০ গ্রাম-শতক হারে প্রয়োগ করতে হবে। পানির পিএইচ পরীক্ষা করে যদি ৬ এর নিচে থাকে প্রতি শতাংশে ১ কেজি হারে পাথুরে চুন প্রয়োগ করতে হবে।
চুনের পরিবর্তে জিওটক্স-জিওলাইট ২৫০ গ্রাম-শতাংশে প্রয়োগ করা যেতে পারে।
এছাড়াও বায়োকেয়ার প্রতি ৭ দিন অন্তর ৮০ থেকে ১২০ মিলি./শতক হারে দিতে হবে প্রতিষেধক হিসেবে। আর নিরাময়ের জন্য পর পর ২ দিন ১২০ থেকে ১৬০ মিলি./শতক হারে প্রয়োগ করতে হবে।
মাসুম
বগুড়া
প্রশ্ন : গরুকে কুকুর কামড় দিয়েছে। কী করব?
উত্তর : কামড়ানো জায়গা ভালো করে পটাসিয়াম পারম্যাঙ্গানেন্ট দ্রবণ দিয়ে ধুয়ে দিতে হবে। রেবিসিন ১০ সিসি ১০০ কেজি ওজনের জন্য ১ম দিন ৪ সিসি, ৭ম দিন ৩ সিসি এবং ২১তম দিন ৩ সিসি ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে প্রয়োগ করতে হবে।
ফিরোজ
রাজশাহী
প্রশ্ন : গরুর বেবিসিওসিস রোগে করণীয় কী?
উত্তর : অ্যান্টিবায়োটিক স্ট্রেস্টোপি, ডায়াভিন, বেবিসিন, কেবিনিল, ব্যাপকিওর যে কোনো একটি ১০০ কেজি ওজনের জন্য ২ মিলি দিতে হবে।
নাজমুল হক
দিনাজপুর
প্রশ্ন : গরুর গায়ে ঘা হয়েছে। কী করণীয় ?
উত্তর : ইঞ্জেকশন এস্টাভেট ৫ সিসি করে রোজ ১ বার ৩ দিন মাংসে দিতে হবে (১০০ কেজির জন্য)।
ইঞ্জেকশন রেনামাইসিন খঅ প্রতি ৫০ কেজি গরুর দেহের ওজনের জন্য ৫ সিসি করে রোজ ১ বার ৩ দিন মাংসে পুশ করতে হবে।
মিজানুর রহমান
পাবনা
প্রশ্ন : গরু ছাগলের নিউমোনিয়া হলে কী করণীয়?
উত্তর : অ্যান্টিবায়োটিক ট্রেপ্টোপি ১০০ কেজি ওজনের জন্য ২.৫ গ্রাম ৩ থেকে ৪ দিন এবং অক্সিলিন ভেট এল এ ১০০ কেজি ওজনের জন্য ১০ মিলি করে ৩ থেকে ৪ দিন দিতে হবে।
আক্রমণাত্মক ছাগল অতি দ্রুত অন্যান্য ছাগল হতে আলাদা করে নিতে হবে। আক্রমণাত্মক ছাগলকে স্যাঁতস্যাতে স্থান থেকে দূরে রাখতে হবে।
আইয়ুব
গাজীপুর
প্রশ্ন : মুরগির বসন্ত প্রতিরোধে কী করণীয়?
উত্তর : ফাউল পক্স ভ্যাক্সিন (Fowl pox Vaccive) ৩ সিসি পানির সাথে মিশিয়ে সুচ ওই দ্রবণে ডুবিয়ে মুরগির বাচ্চার ডানাতে খোঁচা দিতে হবে। ৩১ থেকে ৩৫ দিনের বাচ্চার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। ৩ সিসি দিয়ে ২০০ বাচ্চাকে টিকা দেয়া যায়। ৪ থেকে ৫ দিন বয়সের বাচ্চার ক্ষেত্রে একই নিয়মে পিজিয়ন পক্স ভ্যাকসিন দিতে হবে।
কৃষিবিদ মোহাম্মদ মারুফ*
* কৃষি তথ্য ও যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ, কৃষি তথ্য সার্ভিস, খামারবাড়ি, ফার্মগেট, ঢাকা